অত্যাচারী বাদশাহ এর গল্প
এক দেশে এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিলেন। বিভিন্ন রকমের
অত্যাচার তিনি করতেন। লোকজনের ঘোড়া-গাধা জোর করে কেড়ে নিতেন। বাদশাহ একদিন
সৈন্যসামন্ত সঙ্গে নিয়ে শিকার করতে গেলেন। দলবল নিয়ে শিকার করতে আসা রাজাদের একটা
অভিজাত্য এবং এটা একটা বড় উৎসব। রাজা একা একা একটা শিকারের পেছনে ধাওয়া করতে করতে
অনেকদূর চলে গেলেন। তাঁর অন্য কোনদিকে খেয়াল নেই। তখন সন্ধা। রাজা টের পেলেন বনের
মাথায় ঘন আঁধার নামছে।
সঙ্গেকোনো অনুচর নেই। সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থান। তিনি
কাছাকাছি এক গ্রামেগিয়ে আশ্রয় নিলেন। এক ধনবান ব্যক্তির বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন
বলে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন, ধনী ব্যক্তিটি তার গাধাকে বেদম
প্রহার করছে। গাধা কাতর হয়ে চিৎকার করছে। লোকটি নির্বিকার। সে গাধার একটা পা ভেঙে
দিল।
রাজা তাই দেখে লোকটিকে বললেন– কী হে, অবলা জীবটাকে এভাবে পিটাচ্ছ কেন? গাধার
ঠ্যাং ভেঙে তুমি নিজেরশক্তি পরীক্ষা কর? লোকটি উত্তেজিতভাবে জবাব দিল: আমার কাজ
ভালো কি মন্দ, আমিই সেটা খুব ভালোভাবেজানি। গায়েপড়ে তোমার কথা বলার কোন প্রয়োজন
নেই। জবাব শুনেবাদশাহখুব দুঃখ পেলেন।
এইভাবে এইনিরীহ প্রাণটিাকে মারা কী কারণ
থাকতেপারে দয়া করেসেটা আমাকে বুঝিয়ে বলবে কি? আমারমনে হচ্ছে, তুমি
যেশুধুনির্বোধতাইনয় বরং আস্ত একটা পাগল। লোকটি একথায় হেসে বলল: হ্যাঁ, আমি
পাগলইবটে। তবে সব শুনলে তুমিও বুঝবে, আমি নির্বোধের মতো গাধাটার পা ভেঙে দিইনি।
এরমধ্যে একটা উদ্দেশ্য আছে আমার। আমাদের বাদশাহখুব অত্যাচারী। একথা সবাই জানে। আমার
সুস্থ সবল গাধাটির খবরপেলেনিশ্চয়ই তিনি জোর করেএটা নিয়েযাবেন।
শুনেছি, আমাদের
এইএলাকায় বাদশাহ এসেছেন। তাই গাধাটাকে বাদশাহর অত্যাচার থেকে রক্ষা করবার জন্যে
খোঁড়া করেদিলাম। বাদশাহগাধাটিকে কেড়েনিয়েযাওয়ার চেয়ে খোঁড়া অবস্থায় এটা আমার
কাছেথাকা অনেক ভালো। আমাদের অত্যাচারী বাদশাহকে জানাই শত ধিক! বাদশাহগ্রামবাসী
লোকটির মুখে নিন্দা শুনে খুবই দুঃখ পেলেন। কোন জবাব দিলেন না। রাগে, অপমানে, দুঃখে
সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি। ঘুমহীন রাত কাটল। ভোরেরআলো ফুটল পুব আকাশে।
মৃদুবাতাসবয়ে যাচ্ছে। পাখির কলকাকলিতে মুখর চারদিক। সৈন্যসামন্ত বাদশাহকে খুজতে
খুজতে সাতসকালে হাজির হল সেই গ্রামে। ধনী লোকের বাড়িরসামনেএল তারা। শত শত লোকজনের
মুহূর্তে ভিড় হয়ে গেল। সুসজ্জিত ভৃত্যেরা বাদশাহর সেবায় নিয়োজিত হল। সেই বাড়ির
সামনে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল দরবারবসে গেল। রাজ্যের প্রধান প্রধান ব্যক্তি রাজার
সামনেএসেআসন গ্রহণ করলেন। রাজকীয খানাপিনার আয়োজন করা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই
এলাকার সম্পূর্ণ পরিবেশ পালটে গেল। সৈন্যদল ওঘোড়ার পদভরে থরথর করে কাঁপতে লাগল সেই
এলাকা। বাড়িরসেই লোকটি ব্যাপারস্যাপার দেখে একেবারে থ। গতরাতেস্বয়ং বাদশাহ ছিলেন
তার অতিথি। অর্থাৎ বিপদ ঘনিয়েএসেছে। বাদশাহ ডেকে পাঠালেন লোকটিকে।
ধরে বেঁধে তাকে
আনা হল বাদশাহ’র সামনে। লোকটি বুঝল, তারআত্মরক্ষার আর কোন উপায় নেই। এই মুহূর্তেই
তার জীবন শেষ হবে। আর ভয় করা বৃথা। কারণ উদ্যত তরবারির নিচেই মানবের ভাষা অধিকতর
শক্তিশালী হয়েথাকে। তাই লোকটি সাহসের সঙ্গে বলল– হে মহামান্য বাদশাহ, আমি একাই
শুধু আপনার নিন্দা করি নাই। খবর নিয়ে দেখুন, জনসাধারণ সকলেই একই কথা বলে থাকে।
আমাকে সহজেই হত্যা করা আপনারপক্ষেসম্ভব। আমার কথায় আপনি মনে আঘাত পেয়েছেন–সেজন্য
আমি দুঃখিত। কিন্তু আপনার উচিৎ হবে ভালো কাজ করা– যেন কেউ আপনার বদনাম করতে না
পারে। অন্যায় করে কখনই সুনাম অর্জন করা সম্ভব নয়। আপনার কর্মচারীরা সারাক্ষণ
আপনার গুণকীর্তন করে থাকে। এতে রাজার সম্মান বৃদ্ধি পায় না। প্রজারা যদি বাদশাহ’র
সুনাম করে, তাতেই বাদশাহ’র সম্মান বাড়ে। বাদশাহ এই সাহসী সত্যকথা শুনে দারুন
উদ্দীপ্ত হলেন। লোকটিকে মুক্ত করে দিলেন। সকলের উদ্দেশ্যে বললেন: আমি আজথেকে চেষ্টা
করব ন্যায়পরায়ন, সুশাসক হতে। আমি চাই একজন ভালো বাদশাহ হতে। যেন আমার সুনাম
ছড়িয়ে পড়ে দিক দিগন্তরে।
Tags:
গল্প